Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

সাম্প্রতিক কর্মকান্ড

ভৌগলিক ও ভূতাত্বিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবন দেশ । জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দুর্যোগের প্রকোপ যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে এর ক্ষতির মাত্রা ও ক্ষতির পরিধি এবং সাথে সাথে প্রতিনিয়ত বাড়ছে জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি । বিগত দশকে দুর্যোগ ঘটনের সংখ্যা ও তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে । ঘুর্নিঝড়ের পথ পরিবর্তন ও ঘটনের সংখ্যা, তীব্রতা বৃদ্ধিতে দুর্যোগ প্রস্তুতি কার্যক্রম, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে । বাংলাদেশে ১৬ কোটির বেশী জনগনের বসবাস যা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী ঘনবসতির দেশ হিসেবে পরিচিত । এর মধ্যে ৩ কোটি লোক সমুদ্র উপকুলে বসবাস করে যাদেরকে প্রতিনিয়ত ঘুর্নিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, লবনাক্ততাসহ অন্যান্য ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হয় । প্রায় ৪ কোটি লোক বন্যার দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে । সেই সংগে খরা, লবনাক্ততা, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ইত্যাদি ধীরগতির (Slow onset) দুর্যোগসমূহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আস্তে আস্তে প্রকটতর হচ্ছে । এতদসত্তেও বিগত দুই দশকে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃতের সংখ্যা সাফল্যজনকভাবে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে । ১৯৭০ সালের ঘুর্নিঝড়ে যেখানে ৩ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরন করেছিল, ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরএ সেই মৃতের সংখ্যা মাত্র ৩ হাজারে নেমে এসেছে । দুর্যোগে ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এ সফলতা ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে । দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রমে ব্যাপক সাফল্য থাকলেও আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন দুর্যোগের হুমকি ও চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হচ্ছি । এ রকম একটা পরিবর্তনশীল ও অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে জনগনের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান ও উন্নয়ন কার্যক্রম সফলভাবে এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য, উপাত্ত ও যথাযথ প্রযুক্তি । ঠিক একইভাবে এসব তথ্য, উপাত্ত ও প্রযুক্তি সবক্ষেত্রের, সব পর্যায়ের ব্যবহারকারী ও উপকারভোগীদের উপযোগী করে ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা ।তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিটিজেন চার্টারের অন্তর্ভুক্ত নাগরিক সেবাগুলো দ্রুত জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর জন্য গৃহিত উদ্যোগ সমুহ নিচে দেয়া হলো:
দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এমন জনগোষ্ঠীকে সতর্ক করার জন্য মোবাইল ফোন ভিত্তিক ৩(তিন) ধরনের প্রযুক্তি যথা: CBS, SMS ও IVR নির্ভর দুর্যোগ সতর্কীকরণ পদ্ধতি প্রচলন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে:
IVR: মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দুর্যোগের আগাম বার্তা জনগণের চাহিদা মোতাবেক অবহিতকরনের জন্য Interactive Voice Response (IVR) নামক উদ্যোগটি গ্রহন করা হয়েছে। এখন যে কেউ সিটিসেল ব্যতীত যে কোনে মোবাইল অপারেটরে ১০৯৪১ ডায়াল করে আবহাওয়ার সর্বশেষ তথ্য জানতে পারবেন।
CBS: নির্দিষ্ট এলাকার জনগনের নিকট দুর্যোগের সতর্কবার্তা দ্রুত পৌঁছানোর জন্য মোবাইল ফোনের Cell Broadcasting (CB) প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রবণ কক্সবাজার এবং বন্যা প্রবণ সিরাজগঞ্জ জেলায় মোবাইল ফোনের CB প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্যোগের আগামবার্তা প্রেরণের পরীক্ষামূলক পাইলট অপারেশন শুরু করা হয়।
SMS Alert: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত নির্দিষ্ট ব্যক্তির নিকট দুর্যোগের আগাম সর্তক বার্তা পৌছানোর জন্য SMS Alter ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে । ইতিমধ্যে ৫৪টি জেলা এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ডাটাবেইজ তৈরী করা হয়েছে।
Social Protection Management Information System (SPMIS): সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনী কর্মসূচীর সুষ্ঠু তদারকী ও নীতি নির্ধারনে সহায়তার জন্য বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ/বিতরণ কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্যাদি ডাটাবেইজ এ সংরক্ষন করার জন্য ওয়েবসাইট ভিত্তিক SPMIS প্রবর্তন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্হাপনা অধিদপ্তরের জেলা ভিত্তিক কার্যক্রম ওয়েব পোর্টালে প্রকাশ করা হচ্ছে এবং এ পোর্টালটির লিংক ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের পোর্টালের সাথে যুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।
Microzonation Map: আইসিটি নির্ভর Microzonation Map ভুমিকম্পের ঝুকি মুক্ত নগরায়নের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা শহরের ভৌত পরিকল্পনা, উপযুক্ত ভূমি ব্যবহার, নতুন নগরায়নের উপযুক্ত স্থান চিহ্নিতকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বিল্ডিং কোড হালনাগাদকরণ, পুরানো অবকাঠামো মেরামত/পূন: নির্মাণ/রেট্রোফিটিং কাজে ব্যবহার করা হয়। ভূমিকম্প জনিত বিপদাপন্ন এবং ঝুঁকি বিবেচনা করে দেশের ৩ (তিন) বড় শহর যথা: ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট Microzonation Map তৈরী করা হয়েছে। দেশের ঝুঁকিপূর্ণ আরো ৬(ছয়)টি শহর যথা: টাংগাইল, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর এবং রাজশাহীর Microzonation Map তৈরীর কাজ ২০১৪ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
Cyclone Shelter Database: উপকূলীয় অঞ্চলে নির্মিত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যাদি ওয়েবসাইট ভিত্তিক ডাটাবেইজে সংরক্ষন করা হয়েছে। এ ডাটাবেইজটিতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলির কাঠামোগত এবং আনুষাঙ্গিক তথ্য যেমন: ভৌগলিক অবস্থান (অক্ষাংশ/দ্রাঘিমাংশ), ব্যবহার উপযোগিতা, ধারনক্ষমতা, ইত্যাদি সংরক্ষন করা হয়েছে। এ ডাটাবেইজটির তথ্য ব্যবহার করে নতুন ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মানের সঠিক স্থান নির্ধারণ করা, ঘূর্ণিঝড়ের সময় লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার জন্য উপযুক্ত পথ নির্ধারন করা এবং আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা ও মেরামতের প্রয়োজনীয়তা নিরুপণ করা যাবে।
Inundation Map/Risk Map for Storm Surge: বাংলাদেশের দক্ষিন উপকূলীয় অঞ্চল প্রায় প্রতি বছর ঘূর্নিঝড় জনিত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হয়, ফলে জীবন-জীবিকা এবং অবকাঠামোর ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য দেশের দক্ষিন উপকূলীয় অঞ্চলের জলোচ্ছাস জনিত বন্যার স্থান ভিত্তিক গভীরতার তথ্য নির্ভর Inundation Map/Risk Map for Storm Surge তৈরী করা হয়েছে, এ মানচিত্র হতে এ সকল এলাকার ঘর বাড়ীর ভিটা কতটুকু উঁচু করতে হবে, আশ্রয়কেন্দ্র, রাস্তা বা অন্যান্য অবকাঠামো কতটুকু উঁচু তে করতে হবে, তার ধারনা পাওয়া যাবে।
এবছরের জাতীয় দুর্যোগ পস্তুতি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্য জানি, দুর্যোগের ক্ষতি কমিয়ে আনি’ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথ পরিক্রমায় এটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে । বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার ও বিজ্ঞান ভিত্তিক বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল, তথ্য ও উপাত্ত ব্যবহারের ফলে সাম্প্রতিক সময়ে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে উল্লেখযোগ্য সফলতা এসেছে । দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রমকে আরও বিজ্ঞানভিত্তিক, সময়োপযোগী ও সব পর্যায়ের জন্য ব্যবহারোপযোগী করে তোলা বর্তমান সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য । জাতির পিতা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ওয়ারলেস এর মাধ্যমে ১৯৭২ সালে ঘূর্নিঝড়ের আগাম বার্তা প্রদানের ব্যবস্থা সংযোজন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যে ব্যবহার শুরু করেছিলেন, তারই সুযোগ্য কন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার সে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন ।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, উদ্যোগ, সম্মেলন ও প্রক্রিয়া যেমন দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের ক্ষেত্রে UNISDR এর World Conference on Disaster Risk Reduction এর সাম্প্রতিক যে ঘোষনা অর্থাৎ Sendai Framework for Disaster Risk Reduction 2015-2030 দলিলেও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর সমধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে ।দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রম বাস্তবায়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও নানা পর্যায়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের কিছু প্রাতিষ্ঠানিক দিক, কার্যক্রম ও উল্লেখযোগ্য সফল উদ্যোগ
Modeling এর ব্যবহার
আধুনিক ও যুগোপযোগী সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মডেলের ব্যবহার করে দুর্যোগ ঝুঁকি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা ও সমীক্ষা কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে । যেমন তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আদ্রতা ও বায়ুর গতিবেগ বিষয়ক গবেষণা কাজে আঞ্চলিক জলবায়ু মডেল (egional climate model) প্রেসিস (PRECIS) ব্যবহার করা হয়েছে । এই গবেষণালব্ধ ফলাফল জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচী প্রনয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে । যেমন -
Inundation Map/Risk Map for Storm Surge - বাংলাদেশের দক্ষিন উপকূলীয় অঞ্চল প্রায় প্রতি বছর ঘূর্নিঝড় জনিত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হয়, ফলে জীবন-জীবিকা এবং অবকাঠামোর ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য দেশের দক্ষিন উপকূলীয় অঞ্চলের জলোচ্ছাস জনিত বন্যার স্থান ভিত্তিক গভীরতার তথ্য নির্ভর Inundation Map/Risk Map for Storm Surge তৈরী করা হয়েছে, এ মানচিত্র হতে এ সকল এলাকার ঘর বাড়ীর ভিটা কতটুকু উঁচু করতে হবে, আশ্রয়কেন্দ্র, রাস্তা বা অন্যান্য অবকাঠামো কতটুকু উঁচু তে করতে হবে, তার ধারনা পাওয়া যাবে।
Trend Analysis - জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষত খরার জন্য Global Circulation Model (GCM) ও MAGICC/SCENGEN Software ব্যবহার করে খরার গতি-প্রকৃতির চিত্র (Trend) নির্নয় করা হয়েছে; যার মাধ্যমে ২০১৫ সাল থেকে ২০৬৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের খরার চিত্র (Trend) সম্পর্কে ধারনা লাভ করা যায় 
Hydrodynamics/Fluid Dynamics - MIKE 11 ও GBM বেসিন মডেল ব্যবহার করে বন্যা পূর্বাভাসে পূর্বের ৩ দিনের স্থানে লিড টাইম আরও ২ বাড়িয়ে ৫ দিনে উন্নীত করা হয়েছে যা এ অঞ্চলের সর্বোচ্চ লিড টাইম । বন্যা পূর্বাভাস স্থাণীয় জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধায় আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের ফ্লাড ভলান্টিয়ার হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রদান করে পাইলট কার্যক্রম শুরু হয়েছে । এছাড়াও Hydrodynamics/Fluid Dynamics Model ব্যবহারের মাধ্যমে নদী ভাংগনের ভবিষ্যত চিত্র (Trend) নির্নয় করা হয়েছে যা বিশ্লেষণ করে ভাংগন প্রবন এলাকা চিহ্নিত করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী পূনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায় । 
Geoscience এর ব্যবহার
HAZUS Software ব্যবহার করে ভূমিকম্পের বিপদাপন্নতা (Vulnerability) ও ঝুঁকির (Risk) Scenario প্রস্তুত করা হয়েছে যার ফলাফল নগর দুর্যোগ ঝূঁকি হ্রাস পরিকল্পনায় ব্যবহার করা হচ্ছে । যেমন – Risk ও Vulnerability এ্যাটলাস ।Active Fault Modeling - Active Fault Model ব্যবহার করে বাংলাদেশ ও এর আশে-পাশে Active Fault Line চিহ্নিত করা হয়েছে যার উপর ভিত্তি করে দেশে প্রথমবারের মতো ৩টি বড় এবং ৬টি ছোট শহরের জন্য ভূমিকম্প ঝুঁকি মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে । কোন Fault Lineএ কি মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে সে সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায় । পাশাপাশি প্রতিটি শহরের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের জন্য শহর ভিত্তিক কন্টিনজেন্সি প্লান তৈরী করা হয়েছে । এছাড়াও ভূমিধ্বস, Subsidence এবং Liquefaction এর গতি-প্রকৃতি অনুধাবনে Geoscience এর ব্যবহার করা হচ্ছে
Microzonation Map – Geoscience ব্যবহার করে দেশে প্রথমবারের মতো ভূমিকম্প জনিত বিপদাপন্নতা এবং ঝুঁকি নিরূপণ করে দেশের ৩ (তিন) বড় শহর যথা: ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট Microzonation Map তৈরী করা হয়েছে এবং আরও ৬ টি শহরে Microzonation Map তৈরী করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে । Microzonation Mapটি কন্টিনজেন্সি প্লান ও বিল্ডিং কোড হাল-নাগাদ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে ।
GIS and RS এর ব্যবহার
Geographical Information System and Remote Sensing প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন আপদ ও দুর্যোগের ঝুঁকি নিরূপন করা হচ্ছে । এছাড়াও GIS পদ্ধতিতে বিভিন্ন আপদের ঝুঁকি ও বিপদাপন্নতা মানচিত্র ও তথ্য সমৃদ্ধ ডিজিটাল এ্যাটলাস তৈরি করা হয়েছে । এর মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং দুর্যোগের অবস্থা সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যাচ্ছে ।
নদী অববাহিকা ব্যবস্থাপনায় দূর অনুধাবন প্রযুক্তি - Japan Aerospace Exploration Agency (JAXA) এর কারিগরি ও Asian Development Bank (ADB) এর আর্থিক সহযোগিতায় স্যাটেলাইট প্রযুক্তি (SBT) ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) ব্যবহারে ‘বন্যা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায়’ মনিটরিং ও পূর্বাভাষ ব্যবস্থা উন্নয়নে বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামে যুগপৎভাবে ‘Applying Remote Sensing Technology in River Basin Management’ শীর্ষক পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র (NDRCC) - যে কোন দুর্যোগে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়াদান এবং বিশেষতঃ আগাম সতর্ক সংকেত প্রচার সংশ্লিষ্ট দুর্যোগ সাড়াদান কেন্দ্রগুলো, যথা- বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র ইত্যাদি এর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করার নিমিত্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমকে পরিবর্তন করে ‘জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র’ (NDRCC) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেন্দ্রটিতে প্রয়োজনীয় ইকেলট্রনিক যন্ত্রপাতি ও টেলিফোন স্থাপন করে Video Workshop অনুষ্ঠানের উপযোগী করা হয়েছে। কেন্দ্রটি সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা হয় এবং প্রতিদিন ‘দুর্যোগ সংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদন’ প্রকাশ করা হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র (DMIC) – দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (CDMP-II) সহায়তায় জাতীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র (DMIC) স্থাপন করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ৪৮৫টি উপজেলায় ও সকল জেলায় যথাক্রমে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের সাথে Network স্থাপন করা হয়েছে ।
দুর্যোগে আগাম সতর্ক বার্তা প্রচারে মোবাইল প্রযুক্তি - মোবাইল ফোন ভিত্তিক প্রযুক্তি যথা: SMS (Short Message Service) ও IVR (Inter-active Voice Response) ভিত্তিক দুর্যোগ সতর্কীকরণ পদ্ধতি প্রচলন করা হয়েছে। বর্তমানে যে কোন মোবাইল থেকে ১০৯0 নম্বর ডায়াল করে দৈনন্দিন আবহাওয়া বার্তা ও সতর্কীকরণ বার্তা জানা যায় ।
Cyclone Shelter Database - উপকূলীয় অঞ্চলে নির্মিত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যাদি ওয়েবসাইট ভিত্তিক ডাটাবেইজে সংরক্ষন করা হয়েছে। এ ডাটাবেইজটিতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলির কাঠামোগত এবং আনুষাঙ্গিক তথ্য যেমন: ভৌগলিক অবস্থান (অক্ষাংশ/দ্রাঘিমাংশ), ব্যবহার উপযোগিতা, ধারনক্ষমতা, ইত্যাদি সংরক্ষন করা হয়েছে। এ ডাটাবেইজটির তথ্য ব্যবহার করে নতুন ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মানের সঠিক স্থান নির্ধারণ করা, ঘূর্ণিঝড়ের সময় লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার জন্য উপযুক্ত পথ নির্ধারন করা এবং আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা ও মেরামতের প্রয়োজনীয়তা নিরুপণ করা যাবে।
বিভিন্ন দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ - দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে বিভিন্ন দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপনের উদ্দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে একটি ডিএনএ সেল (Damage and Need Assessment- DNA Cell) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিএনএ সেলে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার স্থাপন ও সংযোজন করা হয়েছে। এই সেলের মাধ্যমে একটি Web-based Damage and Need Assessment Application তৈরির কাজ চলমান রয়েছে, যার মাধ্যমে অনলাইনে দ্রুততার সাথে মাঠ পর্যায় থেকে যেকোন দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতির তথ্য সরাসরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সার্ভারে সংরক্ষণ ও সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রমকে আরও বিজ্ঞান ভিত্তিক করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের তথ্য, উপাত্ত ও প্রচলিত জ্ঞান আহরনের নিমিত্তে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কিছু গবেষণা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে ।
শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম - বাংলাদেশে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস বিষয়ক জ্ঞান এবং অনুশীলনকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও দুর্যোগ সহনশীল জাতি গঠন করার লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৩য় শ্রেণী হতে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মোট ৩১ পুস্তকে দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়াবলী অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এভাবে প্রতি বছর প্রায় ২ কোটি শিক্ষার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করছে। ৭টি পাবলিক ও ৮টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত দক্ষ জনশক্তি তৈরীর লক্ষ্যে মোট ১১ টি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের কারিকুলামে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যথাযথ ভূমিকা রাখার প্রয়াশে বিজ্ঞান মনষ্ক একটি ভবিষ্যত প্রজন্ম তৈরি করা হচ্ছে ।
কৃষিতে অভিযোজন বিজ্ঞান - পরিবর্তিত জলবায়ুতে অভিযোজন উপযোগী ফসলের জাত উদ্ভাবনের জন্য কৃষি বিজ্ঞানীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । বিজ্ঞানভিত্তি ঝুঁকি হ্রাস ও অভিযোজন শিক্ষা ‘ক্লাইমেট ফিল্ড স্কুল’এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ।
স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ঝুঁকি নিরুপন (সিআরএ) এবং গ্রামীণ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রম - সিআরএ পক্রিয়ায় লোকায়ত জ্ঞানের সাথে হাল-নাগাদ, বিজ্ঞান ভিত্তিক ও সর্বশেষ তথ্য সংযোজন করার ফলে স্থানীয় ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রম বাস্তবভিত্তিক ও আরও কার্যকরী হচ্ছে । ফলে সুনির্দিষ্ট ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রম ও দুর্যোগ সহনশীল পদক্ষেপ গ্রহণ সহজতর হচ্ছে ।
একটি দুর্যোগ সহনশীল জাতি গঠনের উদ্দেশ্যে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন বিষয়ে আরও উন্নত শিক্ষা ও গবেষণা করার সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন । এক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ ও প্রনোদনা দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রমকে আরও বেগবান করবে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে; এরমধ্যে সক্ষমতার (Capacity) অভাব, প্রাতিষ্ঠানিক ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, অপ্রতুল বিনিয়োগ এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা উল্লেখযোগ্য । এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা সকলেই সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি । দেশীয় উদ্যোগের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগীতার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে ।
আগামী দিনে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর করার প্রয়াশে আমরা আমাদের সব চেষ্টা ও উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাব এবং একটি দুর্যোগ সহনশীল ও সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো ।
 
 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ই-লাইব্রেরি
 
ই-লাইব্রেরি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম/লাইব্রেরি যা দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা এবং নীতিমালা ধারন করে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জড়িত প্রতিষ্ঠান,গণমাধ্যম ও ব্যক্তিবর্গের মাঝে তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ প্রদান করে।ই-লাইব্রেরির এর ওয়েব লিংকঃWWW.DMIC.ORG.BD/E-LIBRARY